নয়াদেশ ডেস্ক রিপোর্ট॥ ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার শেষ মুহূর্তে বিএনপিতে প্রার্থী বদলের নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। বিভিন্ন আসনে ঘোষিত দলীয় প্রার্থী রদবদল করা হচ্ছে। দলের ত্যাগী ও যোগ্যদের ভাগ্য খুলছে। মনোনয়ন দলের যোগ্য নেতাদের দেয়ায় এসব আসনে এখন বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ওদিকে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল ভাবিয়ে তুলছে বিএনপিকে। প্রায় অর্ধশত আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীর তৎপরতা আর স্বতন্ত্র নির্বাচনের ঘোষণায় হিমশিম খাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে ১৭টি আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করলেও বাকিগুলোর সমস্যা এখনো রয়েই গেছে। কিছু কিছু আসনে প্রার্থী জটিলতা আর কোন্দল ভোগাচ্ছে। সূত্র জানায়, কিছু আসনে আরও প্রার্থী রদবদলের প্রক্রিয়া চলছে। এসব আসনে প্রার্থী পরিবর্তন আসতে পারে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার পর প্রার্থী পরিবর্তনসহ বেশকিছু চমক দেখিয়েছেন। সামনে এরকম আরও কিছু সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার দিন থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকে সারা দেশে বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ শুরু করেন মনোনয়নবঞ্চিত নেতার কর্মী সমর্থকরা। যদিও বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময়েই বলা হয়েছিল- ঘোষিত তালিকা প্রাথমিক কিংবা সম্ভাব্য। এই প্রার্থীরা চূড়ান্ত নন এবং প্রয়োজনে যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে, পার্লামেন্টারি বোর্ড যদি মনে করে, তারা পরিবর্তন আনবেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭টি আসনে রদবদল করা হয়েছে। কয়েকটি আসনে নিজ দলীয় প্রার্থীকে সরিয়ে জোটের প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়েছে। কোনো কোনো আসনে বয়স বিবেচনায়, ঋণখেলাপিসহ আরও কিছু অভিযোগে প্রার্থী বদল করেছে দলটি। সেখানে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন আসনে বিক্ষোভ, মিছিল এবং প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সমাবেশ হচ্ছে। নেতাকর্মীদের আন্দোলনের তোপে এসব আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। আরও কিছু আসনে পরিবর্তন আনা হবে। দলের সিনিয়র নেতারা বিচার-বিশ্লেষণ করে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার কথা ভাবছেন। এ ছাড়া ফাঁকা আসনগুলোতেও প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়েছে।
গতকাল পাঁচটি আসনে মনোনয়ন রদবদল করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে সমমনা শরিক দল বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্র্থকে দেয়া হলেও এটা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে নির্বাচন করবেন। পার্থকে ভোলা-১ আসনে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে জেলা বিএনপি’র সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরকে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমানকে দল থেকে মনোনয়ন দিয়েছিল। তবে বয়স ও অসুস্থতার কারণে তার স্থানে বিএনপি নেতা কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দলটি। চট্টগ্রাম-৬ আসনে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন গিয়াস কাদের চৌধুরী। কিন্তু নানান বিতর্কের কারণে গতকাল সেখানে মনোনয়ন পরিবর্তন করে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয় বিএনপি। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন আবুল কালাম। তিনি তিনবারের সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি। এর আগে এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ব্যবসায়ী মাসুদুজ্জামান।
কবির আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছি। দলকে সংগঠিত করেছি। একইসঙ্গে কর্মী তৈরি করেছি। কিন্তু মুশফিকুর রহমানকে মনোনয়ন দেয়ায় কর্মীরা আন্দোলন করেছে। পরে দল চিন্তা-ভাবনা করে আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। আমার ওপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেটা আমি শতভাগ পালন করবো। এই আসন আমি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উপহার দেবো। আর আমাকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য আমি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি যে বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখেন, সেই দেশ গঠনে আমি আমার সর্বোচ্চ বিলিয়ে দেবো।
আরও যেসব আসনে রদবদল: বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে সরিয়ে চট্টগ্রাম-১১ আসনে নেয়া হয়েছে। এই আসনে বিএনপি’র প্রয়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। চট্টগ্রাম-৪ আসনে বিএনপি নেতা কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এই আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ আসলাম চৌধুরীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। ঢাকা-১২ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাইফুল আলম নীরব। এই আসনটি জোটসঙ্গী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এই আসনে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
ওদিকে যশোর-৫, যশোর-১ ও যশোর-৬ আসনের প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিএনপি। যশোর-৫ আসনে প্রাথমিকভাবে মণিরামপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। পরে তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি’র যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মুফতি রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা। নড়াইল-২ আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ১১ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে এই আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
গত ৩রা নভেম্বর বিএনপি প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। একদিন পরেই মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামাল মোল্লার নাম স্থগিত করা হয়। পরে গত ৪ঠা ডিসেম্বর ৩৬টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। সবমিলে ২৭২টি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। এর বাইরে সম্প্রতি বাকি ২৮ আসনেও প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত করেছে দলটি। এরমধ্যে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ৪টি আসন, নাগরিক ঐক্যে ১টি, গণসংহতি আন্দোলন ১টি, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টি ১টি, গণঅধিকার পরিষদ ১টি আসন পেয়েছে। এ ছাড়া নিজ দল বিলুপ্ত করে ২টি দল ২ আসন, বিএনপিতে যোগদান করে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন ৩ নেতা।
মন্তব্য করুন