যেন আলাদিনের চেরাগ শত কোটি টাকার মালিক কেরানীগঞ্জের ইউপি মেম্বার রাসেল মিয়া ! প্রকাশিত: ৭:৫৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০২১ কেরানীগঞ্জ থানার কুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) রাসেল মিয়া নয়াদেশ রিপোর্ট॥ কল্পকাহিনীকেও হার মানিয়েছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কুন্ডা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) রাসেল মিয়ার উত্থানের কাহিনী। হতদরিদ্র পরিবারের রাসেল মাত্র কয়েক বছরে এখন প্রায় শত কোটি টাকার মালিক। নিজ নামে, ভাই-বোন ও আত্ম্রীয়-স্বজনের নামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। হাঁকান দামি গাড়ি। ইটভাটা, ডকইয়ার্ড কী নেই। ১৮টি ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকা। আছে বাগানবাড়ি, সেখানে বসান মদ-জয়ার আসর। এমনকি মালয়েশিয়ায় রয়েছে সেকেন্ড হোম। কয়েক বছরের ব্যবধানে সামান্য একজন ইউপি মেম্বারের এমন উত্থান যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো। গত ১৩ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) রাসেলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘মেম্বার হয়ে রাসেল মিয়া সাধারণ মানুষের ভূমি জবরদখল ও চাঁদাবাজি করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রাসেল মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন দৃশ্যত ১৪৬৫ শতাংশ জমির মালিক, যার সরকারি মূল্য ধরলেও দাঁড়ায় কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা। এর বাইরে আরো সম্পদের মালিক হলেও এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আয়কর রিটার্নে মাত্র ৩৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সম্পদের মালিক বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ তিনি ও তার ভাইয়েরা ৬টি ইটভাটা ও দুটি ডকইয়ার্ডের মালিক। পূবালী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জের ধর্মপাশা শাখাসহ অন্তত ১৮টি ব্যাংকে রাসেলের হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ। অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘হিন্দুদের জমি ছাড়াও সাধারণ মানুষের জমিজমা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দখল করেছেন রাসেল। রাতের আঁধারে অন্যের জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করেন, কখনও নিয়ে যান নিজেদের ইটভাটায়। এনিয়ে একবার পুলিশের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। হিন্দুদের জমিজমায় ফাঁক দেখলেই কৌশলে নিজেই মালিক হয়ে দখল করে নেন সেই জমি। জমি নিয়ে জটিলতা নিরসনে মেম্বার হিসেবে হিন্দুরা তার কাছে সালিশ নিয়ে গেলে তিনি নিজেই কৌশলে ঢুকে পড়ে জমির মালিক বনে যান। এজন্য স্থানীয় ভূমি রেজিস্ট্রি কার্যালয়েও রয়েছে তার সিন্ডিকেট। রাসেলের বিরুদ্ধে স্থানীয় ব্রাহ্মণগাঁওয়ে হিন্দুদের রথখোলার মঠ ভেঙ্গে প্লট বানারোর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। যেই রথখোলায় একসময় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা পূজা করতেন সেটির মঠ ভেঙ্গে শুধু ব্যক্তিগত প্লট তৈরিতেই ক্ষান্ত হননি তিনি, প্লটে যাতায়াতের জন্য রথখোলার মাঝখানে রাস্তাও বানিয়েছেন। সেই রাসেল আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আবারও মেম্বার পদে প্রার্থী। এনিয়ে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রথখোলার মঠ ভেঙ্গে প্লট বানারোর অভিযোগে রাসেল মিয়ার শাস্তি দাবি করেছে স্থানীয় পূজা উদযাপন কমিটি। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অনুপ কুমার বর্মন বুধবার তার শাস্তি দাবি করে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, এমনিতেই নানা কারণে দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় চাপে রয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয়ভাবে প্রশাবশালী হবার কারণে মঠ ভেঙ্গে প্লট তৈরিকারীর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযুক্তকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, মঠ ভেঙে ফেলার ঘটনা লজ্জাজনক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য আতঙ্কের। স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্রাহ্মণগাঁওয়ে তিন বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়ি গড়ে তুলেছেন রাসেল মিয়া। সেখানে নিয়মিত মদ-জুয়ার আসর বসছে। ঘনঘন যাতায়াত করেন মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে। অঢেল টাকায় মালয়েশিয়ায় গড়েছেন সেনন্ড হোম। রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতের তাণ্ডবের ঘটনার আসামিও ছিলেন এই রাসেল। তার বিরুদ্ধে ৭-৮টি মামলা রয়েছে। ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগে রাসেলের বিরুদ্ধে গত ২৪ অক্টোবর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। SHARES অপরাধ বিষয়: