লিবিয়ায় যেভাবে বাংলাদেশিদের দাস হিসেবে বেচে দেওয়া হচ্ছে প্রকাশিত: ৭:০১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০২১ নয়াদেশ ডেস্ক রিপোর্ট॥ ইতালির পালেরমো শহরের এক ভবনের সামনে উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে ছিলেন এক তরুণ বাংলাদেশি অভিবাসী। লিবিয়া থেকে ইতালিতে এসেছিলেন ১৯ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি। আলী (ছদ্মনাম) নামের তরুণটি লিবিয়ায় কাজ করতে এসে প্রতারিত হয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে পালিয়ে ইতালিতে যান। আফ্রিকান সাংবাদিক ইসমাইল আইনাশের কাছে নিজের হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন আলী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আলী সিদ্ধান্ত নেন, ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ যাবেন। বিদেশে লোক পাঠায়, এমন এক দালালের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর উৎসাহিত হন তিনি। ইতালিরই সিসিলিতে থাকা আরও একজন বাংলাদেশি মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০১৬ সালে দালালের মাধ্যমে দেশ ছাড়ার কথা বর্ণনা করেছেন আফ্রিকান সাংবাদিক ইসমাইলের কাছে। ওই বাংলাদেশি অভিবাসীর অভিভাবক তাকে বিদেশ পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য তা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে দালালকে বেশি টাকা দিয়ে ২১ বছর দেখিয়ে পাসপোর্ট ও অন্যান্য দরকারি কাগজপত্র বানানো হয়। দালাল লোকটি আলীকে লিবিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিত। ঢাকার উপকণ্ঠে একটি প্রসাধনীর দোকানে কাজ করতেন তিনি। ঢাকার অদূরে পদ্মা নদীর তীরের একটি গ্রামে আলীর বাড়ি। দালালদের ফাঁদে পড়ে অবৈধভাবে লিবিয়ায় যাওয়া অনেক বাংলাদেশি অভিবাসী পরে নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। গৃহযুদ্ধ কবলিত লিবিয়ার প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারেন। তাদের কথায়, লিবিয়ায় এখন অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সীমাহীন দুর্দশা, শোষণ ও দাসত্ব ছাড়া আর কিছু নেই। লিবিয়ায় যাওয়ার আগে আলীর দেশটি সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। ওই দালাল আলীর মা-বাবাকে জানায়, লিবিয়ায় তিনি মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। আলীর বাবা বাড়ির পালের তিনটি গরু থেকে একটি বিক্রি করে দালালকে টাকা দেন। মুক্তিপণের জন্য আটক বাংলাদেশ থেকে যাত্রা শুরুর এক সপ্তাহ পর লিবিয়ায় পৌঁছেন আলী। তিনি ঢাকা থেকে বাসে ভারতের কলকাতা এবং কলকাতা থেকে বিমানে করে মুম্বাই, দুবাই হয়ে মিসরের কায়রো যান। পরে এক পর্যায়ে লিবিয়ার বেনগাজি বিমানবন্দরে পৌঁছেন। নেমে রাস্তাঘাটে পুলিশবিহীন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখার কথা বলেছেন তিনি। বেনগাজি পৌঁছার পরপরই দালালদের স্থানীয় প্রতিনিধিরা নিয়ে যায় আলীকে। জেলখানার মতো একটি স্থানে তাকে আটকে রাখে। তারা আলীর সঙ্গে থাকা সব টাকা কেড়ে নেয়। এরপর তাকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করে। আলীকে মুক্ত করতে তার মা-বাবা বাকি দুটি গরু বিক্রি করে দালালদের টাকা দেন। আলীকে একটি ছোট কক্ষে আটকে রাখা হয়। সেখানে আরও ১৫ বাংলাদেশিকে রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে যারা মুক্তিপণ দিতে পারতেন না তাদের খাবারও দেওয়া হতো না। তাদের প্রায়ই মারধর করা হতো। আলী প্রচণ্ড মারের পর এক তরুণের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখেন। তাকে কেউ সাহায্য করেনি বা হাসপাতালে নেয়নি। ২০২০ সালের মে মাসে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলির কাছে মিজদা এলাকায় একটি গুদামকক্ষে ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন বাংলাদেশি। পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়ার পর আলী বেনগাজিতে একটি পানি বোতলজাত করার কোম্পানিতে তিন মাস কাজ করেন। এরপর একটি টাইলস কারখানায় কাজ করেন। লিবিয়ায় বর্তমানে ২০ হাজারের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার বলে মনে করা হয়। অনেকে কাজের কোনো পারিশ্রমিক পান না। অনেককে অসহনীয় পরিস্থিতিতে কাজ করতে এবং বসবাস করতে SHARES প্রচ্ছদ বিষয়: