মুগদায় এক’শ টাকার জন্য বড় ভাইকে খুন

প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ, মে ১০, ২০২০

নয়াদেশ রিপোর্ট॥ মাত্র এক’শ টাকার জন্য আপন বড় ভাইকে খুন করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ছোট ভাই। হত্যার পর বড় ভাইয়ের লাশ রেস্টুরেন্টের ভেতরে রেখে বাসায় গিয়ে গোসল করে ছোট ভাই রাজীব ঘোষ। এমনকি রাতে বড় ভাই বাসায় না ফেরায় বাবার সঙ্গে তাকে খুঁজতেও বের হয় সে। গত বৃহস্পতিবার ইফতারের পরপরই রাজধানীর ৯৩/এ, উত্তর মুগদার ‘জীবন ফুড ফ্যান্টাসি’ নামে দোকানের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। ছোট ভাই রাজীব ঘোষ খুন করেন বড়ভাই জীবন ঘোষকে।
চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় এবং খুনি রাজীব দোকানের শাটার বন্ধ করে বাসায় চলে যাওয়ায় খুনিকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছোট ভাই রাজীবকে খুনি হিসেবে শনাক্ত এবং তাকে গ্রেফতার করে মুগদা থানা পুলিশ। শুক্রবার বাবার করা মামলায় গ্রেফতারের পর গতকাল দুপুরে আদালতে রাজীব ১৬৪ ধারায় খুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সবুজবাগ জোনের সিনিয়র সহকারি কমিশনার রাশেদ হাসান দৈনিক নয়াদেশকে বলেন, ঘটনার পরপরই মুগদা থানার অফিসার ইনচার্জ প্রলয় কুমার সাহা, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ মাসুদুর রহমান এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ রহিদুল ইসলামসহ মুগদা থানার অন্যান্য অফিসার এবং ফোর্সদের নিয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আমি জীবনের রক্তাক্ত নিথর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে প্রেরন করি।

তিনি বলেন, খুনিকে শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলের বিপরীত পাশের ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করি। পর্যালোচনা করে দেখা যায় নিহত জীবনের ছোট ভাই রাজীবের ওই সময়ের মুভমেন্ট ছিল সন্দেহজনক। সে দোকান থেকে বের হয়ে ইট ফেলে। তাকে অপ্রস্তুত দেখাচ্ছিল। তার আচরণ স্বাভাবিক ছিল না। এমনকি সে বাসায় গিয়ে বলেছিল, বড় ভাই জীবন দোকান বন্ধ করেছে। কিন্তু সিসি ক্যামেরায় রাজীবকে দোকান বন্ধ করতে দেখা যায়। এরপর আরও কিছু বিষয় সন্দেহ করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তথ্য-প্রমাণ মিলে যাওয়ার পর রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, রাজীব কিছুটা বখাটে স্বভাবের ছিল। কিছুদিন আগেও সে কিডনাপের একটা নাটক সাজিয়েছিল। বৌদ্ধ মন্দির এলাকা থেকে নাকি তাকে কয়েকজন তুলে নিয়ে মিরপুর এলাকার কোথাও আটকে রেখেছিল। পরে তার মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে পরিবারের কাছে ৪-৫ লাখ টাকা চেয়েছিলো। টাকা না পেয়ে কয়েকদিন পর নিজেই বাসায় ফেরত আসে।

রাশেদ হাসান আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রাজীব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং গতকাল দুপুরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া তথ্য এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি উল্লেখ করেন, প্রায়ই জীবনের কাছ থেকে টাকা নিতেন রাজীব। গত বৃহস্পতিবার ৯৩/এ, উত্তর মুগদার জীবন ফুড ফ্যান্টাসি দোকানে কাজ করছিলেন দুই ভাই। ওই দিনও জীবনের কাছে ১০০ টাকা চান রাজীব। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাজীব বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে জীবন একটা চড় মারেন রাজীবের গালে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে বাইরে আসেন রাজীব। বাইরে তখন ইফতারের সময়। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি নেই। দোকানের শাটারের বাইরে থাকা একটা ইট নিয়ে ভেতরে ঢুকে রাজীব ঘোষ বড় ভাই জীবন ঘোষের মাথায় পেছনের দিক সজোরে একাধিক আঘাত করেন। জীবন ঘোষ মারা গেছেন ভেবে ভয়ে মোবাইল ফোন, দোকানের চাবি নিয়ে বাইরে আসেন রাজীব ঘোষ। শাটার তালাবদ্ধ করে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ইট রাস্তায় এবং দোকানের চাবি ম্যানহোলে ফেলে বাসায় ফেরেন তিনি। রাজীবকে খুনি হিসেবে শনাক্তের পর তার দেয়া তথ্যমতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ইট এবং বাসার বাথরুম থেকে হত্যাকান্ডের সময় পরনে থাকা গেঞ্জি জব্দ করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রহিদুল ইসলাম নয়াদেশকে জানান, দোকানের ভেতরে আসামি রাজীব ঘোষ তার আপন বড় ভাইকে মাত্র ১০০ টাকার জন্য পিছন দিক থেকে ইট দিয়ে প্রথমে মাথায় সজোরে একাধিকবার আঘাত করে এবং এরপর গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আপন ভাইকে হত্যার পর কৌশলে জীবন ঘোষের লাশ দোকানের ভেতরে ফেলে রেখে যায়। জবানবন্দি দেয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।