সবার সহযোগিতায় দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে আমরা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই ॥ বিওএ সভাপতি

প্রকাশিত: ৮:২৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২১

নয়াদেশ রিপোর্ট॥ বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের (বিওএ) নব-নির্বাচিত সভাপতি সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ (এসবিপি, ওএসপি, এনডিইউ, পিএসসি, পিএইচডি) সবার সহযোগিতায় দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি সোমবার ( ২৭ ডিসেম্বর) বিওএ ভবনে নব-নির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পরিচিতি পর্ব শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ।
বিওএ সভাপতি শুরুতেই বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর শুভক্ষণে এই দায়িত্ব পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। আর এ জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমার উপরে আস্থা রাখার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি যে আস্থা আমার উপর রেখেছেন আমি তার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, আমি আজকেই কেবল দায়িত্ব নিলাম। আমার সাথে যারা আছেন, এক্সিকিউটিভ কমিটির সবার সঙ্গে আলোচনা করলাম। তাদের পরিচিতি পেয়ে দেখলাম এই কমিটির সবাই যার যার ফিল্ডে একজন এক্সপার্ট। তাদের সমন্বিত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমরা একটি সিম্পল গোল রেখেছি। যা আগের চেয়ে ভাল করার লক্ষ্য। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সবার সহযোগিতা পেলে আমরা আগের চেয়ে ভাল করতে পারবো।
ভবিষ্যতে দৃশ্যমান কিছু উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বিওএ সভাপতি বলেন, আমাদের উদ্দশ্যে থাকবে, দৃশ্যমান কিছু দেওয়া। বাংলাদেশ অলিম্পিক আগের চেয়ে ভাল করেছে এবং এর কারণে আমাদের বিভিন্ন ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল এসেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দৃশ্যমানটা হলো আমরা ক্রিকেটে যেমন ভাল করছি, বা ফুটবলে সেরকমটা হওয়া, আমি উদাহরণ স্বরূপ বলতে চাচ্ছিলাম যে, ব্রাজিল কিন্তু যে পরিমান টাকা ফুটবলে ইনভেস্ট করে ক্রিকেটে কিন্তু ততটা করে না। আমাদের যেসব সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, সে সব জায়গায় আমরা বেশি করে ইনভেস্ট করবো। আমরা বিভিন্ন গেমসে লক্ষ্য রাখছি, অলিম্পকে লক্ষ্য রাখছি যাতে পদকের সংখ্যা যাতে বাড়াতে পারি। সেটাই হবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জন। বিষয়টি এমন যে আমরা কিছু অর্জন করেছি।
আপনি অনেক জায়গায় একটু একটু করে ভালো করেছেন তবে পদকের সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। তাহলে আপনি যে ভালো কাজ করেছেন এটা বিচার করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা ফোকাস করছি যে, কোন কোন ইভেন্টে আমাদের পদক সংখ্যা বাড়ানো যায়।
দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে বিওএ সভাপতি বলেনআমি তো কেবল মাত্র দায়িত্ব নিলাম। আমাদের প্রথম পরিচিত সভায় আমরা একমত হয়েছি যে,শিগগিরিই আমরা এক্সিকিউটিভ কমিটির সভা করবো। সেখানেই অ্যাকশন প্ল্যান হবে। তখন আমি আপনাদের একটি পরিষ্কার ধারনা দিতে পারবো কিভাবে আমরা পূর্বের চেয়ে ভালো অর্জন করতে সক্ষম হবো।
অলিম্পিক ভিলেজ সম্পর্কে আরেক প্রশ্নের উত্তরে বিওএ সভাপতি বলেন, এটা ভিজিবল একটি প্রজেক্ট হয়ে থাকলে অবশ্যই তা আমরা এগিয়ে নেব। আমি এখনো জানি না আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম।আমি এইটুকু বলতে পারি, প্রথম বিভাগ ফুটবল ও ক্রিকেট দুইটি খেলারই অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। আমি ক্যাডেট কলেজ থেকে শুরু করে ইনডোর ও আউটডোর অনেক খেলায় জড়িত ছিলাম। আমি ক্রীড়াপাগল মানুষ। সব সময় ফোকাস থাকবে, আমি আমার মন থেকে সেরাটা দিতে চেষ্টা করবো।
কোন কোন ক্রীড়ায় উন্নতি করতে চান প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, আমি বলেছি, আমি সবিস্তারে শুনবো। তারপর কোনটার আগের কি অর্জন ছিল, তারপর কোন জায়গায় আমাদের সম্ভাবনা বেশি, তারপর আমরা এগুবো। তাই আমি এই ব্যাপারে পরেই জানাতে পারবো।
নিজের প্রথম বিভাগ ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন নিয়ে বিওএ সভাপতি আরো বলেন, আমি সেনাবাহিনী ফুটবল দলে ছিলাম। আমি খুলনার প্রথম বিভাগে খেলেছি। এবং খুলনার ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেছি।
অ্যাথলেটিকসে একটি আলাদা ট্র্যাক হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা সময়ের একটা প্রয়োজন,আমরা যত স্পোর্টস ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে পারি, ট্র্যাক বাড়াতে পারবো, অ্যাথলেটিক গ্রাউন্ড বাড়াতে পারবো, ফুটবল মাঠ বাড়াতে পারবো, ক্রিকেট মাঠ বাড়াতে পারবো, ততই আমাদের জন্য ভাল। যত ক্ষেত্র আছে সব এক্সপোজ করবো এবং বাস্তবায়নের জন্য চেস্টা করবো।
মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাকে নিয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বিওএ সভাপতি বলেন, এ ব্যাপারে আমি ও শাহেদ ভাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি ক্রীড়াকে খুবই ভালবাসেন। তাই আমি গ্যারান্টি দিতে পারি। উনি স্বপ্রনোদিত হয়ে বলেছেন, তোমাদের কি কি লাগবে। সাপোর্ট তিনি আমাদের দিবেন। আমি ইতোমধ্যে একটি চিঠি সই করছি এবং উনাকে পাঠাচ্ছি। উনি আমাদের সহায়তা করবেন। উনার যেহেতু আশ্বির্বাদ আছে আর আমাদের ইচ্ছাও আছে। ইনশাআল্লাহ আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি আমরা কিছু করতে পারবো।
দেশের মানুষের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি বলেন,মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ধরেন ফুটবল, ক্রিকেট বা আউট সাইডের দিকে লক্ষ্য রাখা হবে। আর্চারিতে আমরা অনেক পদক নিয়ে আসতে পারবো, কিন্তু সাধারন মানুষের মন ভড়াতে অবশ্যই এসব ডিসিপ্লিনে উন্নতি করতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিওএ সভাপতি আরো বলেন, ওল্ড হিরোদের আমরা সব সময়ই শ্রদ্ধা করি। কারণ আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, গুণির গুনগান না গাইলে গুনি পয়দা হয় না। যারা আমাদের জন্য বিশেষ কিছু করে গেছেন, তাদেরকে কেন মনে করবো না। তাদের কৃতকর্মেরভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই তো আজকের আমরা। আমাদের জন্য যদি আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা জীবন না দিতেন, শহীদরা আত্মাহুতি না দিতেন,এই দেশ স্বাধীন হতো না। আজকে যারা দেশে স্বাধীন করেছেন, কন্ট্রিবিউট করেছেন তাদের প্রতি আমরা যদি কৃতজ্ঞ না থাকি এটা অন্যায় হবে। তাই আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞা জানাচ্ছি।
অলিম্পিকে পদক সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। স্বভাবতই আমি অলিম্পিক নিয়েই ভাববো। সেটা না ভেবে আমার কোন উপায় নেই। অবশ্যই ভাবতে হবে। আমরা অর্জনে বিশ্বাস করি। লক্ষ্য থাকতে হবে অনেক দূর। আজকে যদি আমি চাঁদে যাওয়ার চিন্তা করি, আজ হয়তো পারবো না। কিন্তু লক্ষ্য থাকা ভাল। আমার লক্ষ্য থাকতে হবে যুগোপযুগি চ্যালেঞ্জিং। তবে এতো বেশি চ্যালেঞ্জিং না যে কালকেই আমি অলিম্পিকে ১০০ মিটারে স্বর্ণ জিতবো, সেটা আবার বেশি হয়ে যাবে। আমরা পারবো না। অলিম্পিকে ভাল করার জন্য সাফ গেমস ও এশিয়ান গেমসে ভাল করতে হবে। এগুলো বড় জায়গায় যাওয়ার একটা স্টেপ মাত্র।
এর আগে পরিচিতি সভায় বিওএ’র সভাপতিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা ও সহ-সভাপতি মাহবুব আরা বেগম গিনি এমপি। উল্লেখ্য, বিওএ নব-নির্বাচিত কমিটির পরিচিতি সভায় অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।