কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি সিল মারা ব্যালট উদ্ধার, ভোট স্থগিত

প্রকাশিত: ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্ট॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে কুয়েত মৈত্রী হল থেকে সিল মারা বস্তা ভর্তি ব্যালট উদ্ধার হয়েছে। ওই হলের শিক্ষার্থীরা হল থেকে ব্যালটে ক্রস চিহ্ন দেয়া ব্যালট উদ্ধার করে। পরে তারা সেগুলো গণমাধ্যমের সামনে হাজির করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ওই হলে এখনো পর্যন্ত ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।

কুয়েত-মৈত্রী হলে ভোটের আগে খালী ব্যালট বাক্স না দেখানোর কারণে শুরুতে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বস্তাভর্তি ওই ব্যালট উদ্ধার করা হয়। ব্যালটসহ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে হল প্রভোস্টকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সোমবার সকাল ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সকাল ৮টায় শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই বেগম রোকেয়া হলের তিনটি ব্যালট বাক্স খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নয়টা বুথের মধ্যে ছয়টাতে চলছে ভোটগ্রহণ। এসব অভিযোগের বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার ও হল প্রভোস্ট কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন: রোকেয়া হলের তিনটি ব্যালট বাক্স নিখোঁজ

এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, ভোটার লাইনে শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে। বাইরের শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ আসলেও তাদের হাতে ছাত্রলীগের প্যানেল ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই অভিযোগটিও যাচাইবাছাই করার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে কয়েকবার মোবাইলে কল করেও পাওয়া যায়নি।

এ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন। হলে হলে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্সসহ প্রয়োজনীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম রবিবারেই পৌঁছে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্র ঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সংগঠন এবং স্বতন্ত্র জোট মিলে মোট ১৩টি প্যানেলে প্রতিদ্বনি্দ্বতা করছেন। এর বাইরে বিভিন্ন পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুসারে ডাকসুর ২৫টি পদের বিপরীতে লড়ছেন ২২৯ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ২১ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বনি্দ্বতা করছেন ১৩ প্রার্থী। এ ছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন, সাহিত্য সম্পাদক পদে ৮ জন, সংস্কৃতি সম্পাদক পদে ১২ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১১ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১০ জন ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৪ জন প্রতিদ্বনি্দ্বতা করছেন। এর বাইরে ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে লড়ছেন ৮৬ প্রার্থী। এ ছাড়া ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪ পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ৫০৯ জন। প্রত্যেক ভোটার কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং হল সংসদে ১৩টি পদে একটি করে মোট ৩৮টি ভোট দিতে পারবেন। এ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ২৫৬ জন।

৪৩ হাজার ২৫৬ জন ভোটারের ভোট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৮টি হলে সর্বমোট ৫১১টি বুথ স্থাপন করেছে। মাত্র ছয় ঘণ্টা সময়ে এত বিপুলসংখ্যক ভোটারের ভোট গ্রহণ কতটা সম্ভব তা নিয়ে কয়েকজন প্রার্থী সংশয় প্রকাশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীরা যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোট দিতে পারেন সেজন্য হলগুলোতে পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ৩৫টি, শহীদুল্লাহ হলে ২০টি, ফজলুল হক মুসলিম হলে ৩৫টি, অমর একুশে হলে ২০টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি, জসীম উদ্দীন হলে ২০টি, মাস্টারদা সুর্যসেন হলে ৩৫টি, মুহসীন হলে ৩০টি, রোকেয়া হলে ৫০টি, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৪৫টি, শামসুন্নাহার হলে ৩৫টি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২০টি, কুয়েত-মৈত্রী হলে ১৯টি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২টি, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২৪টি, জিয়া হলে ২০টি ও বিজয় একাত্তর হলে ৪০টি পোলিং বুথ করা হয়েছে।