ইভ্যালির গ্রাহকদের টাকা ফেরতের বিষয়ে বিবেচনা করছে সরকার : বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১

নয়াদেশ রিপাের্ট॥ দেশের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকদের অর্থ কীভাবে ফেরত দেওয়া যায় তা বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি জানান, ইভ্যালির সম্পদ এবং দায়-দেনার হিসাব করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের পাওনা টাকা কী করে ফেরৎ দেওয়া যায় সে বিষয়ে সরকার বিবেচনা করছে। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কার্যালয়ে ‘সোর্সিং বাংলাদেশ-২০২১ ভার্চুয়াল এডিশন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি- ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠানের সম্পদ কাজে লাগানো হয়নি। সেগুলো অন্যরা ভোগদখলে রেখেছে। অথচ গ্রাহক তাদের পাওনা বুঝে পাননি। ইভ্যালির ক্ষেত্রেও যেন এমনটা না হয় সে জন্য গ্রাহকদের টাকা ফেরতের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যানকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু এটা তো সমাধান না। গ্রাহকরা যেন তাদের টাকা ফেরত পান আবার অভিযুক্তরাও যেন শাস্তি পায় উভয় বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সরকার।
টিপু মুনশি আরও বলেন, দেশে বর্তমানে ৩০ হাজার অনলাইন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০-১২টির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে অনলাইন প্রতিষ্ঠানকে খারাপ বলা যাবে না। ভোক্তাদেরও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। আড়াই লাখ টাকার মোটরসাইকেল এক লাখ টাকায় কীভাবে দেওয়া সম্ভব সে বিষয়ে চিন্তা করে তারপর বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগে গ্রাহকদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এদিকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর কোনো সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক কোম্পানি বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একজন গ্রাহক গত ৫ মাস আগে ইভ্যালিতে ওয়াশিং মেশিন অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু গত ৫ মাসেও তাকে অর্ডার বুঝিয়ে না দেওয়া এবং টাকা ফেরত না দেওয়ায় তিনি ইভ্যালির বিলুপ্তি চেয়ে হাইকোর্টে এ আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই আদালত এ আদেশ দেন।
এরআগে বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং মোহাম্মদ কাওছার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যংকের গর্ভনর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এদিকে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট চারটি মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে মো. মুজাহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ধানমন্ডি থানাকে এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। আরিফ বাকের নামে ইভ্যালির এক গ্রাহক মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি হওয়ার পর বিকেলেই রাসেলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।